সমবায় সংগঠনের বৈশিষ্ট্য

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় | NCTB BOOK

সাধারণভাবে কতিপয় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সমমনা ব্যক্তি নিজেদের আর্থিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে। তারা সমতার ভিত্তিতে মূলধন বিনিয়োগ করে, গণতান্ত্রিকভাবে উক্ত সংগঠনটি পরিচালনা করে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে উক্ত সংগঠনের ঝুঁকি ও সূযোগ-সুবিধা ভাগ করে নিতে সম্মত হয়। সমবায় সমিতির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো-


১. সাধারণত নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন সমমনা ও পেশার ব্যক্তিবর্গ স্বেচ্ছামূলকভাবে এ জাতীয় সংগঠন গড়ে তোলে ৷ সমিতির উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধ উপায়ে সমিতির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন। ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, মুনাফা অর্জন নয় ৷

২. ২০০১ সমবায় আইনে তিন ধরনের সমবায় সমিতির উল্লেখ আছে। সেগুলো হলো-
(ক) প্রাথমিক সমবায় সমিতি, যার সদস্য সংখ্যা হবে ন্যুনতম ২০ জন একক ব্যক্তি এবং যাহার উদ্দেশ্য হবে বৈধ উপায়ে সমিতির সদস্যদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। সর্বাধিক সদস্যের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

(খ) কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি, যার সদস্য হবে অন্তত ১০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি এবং উদ্দেশ্য হবে উক্ত সদস্য সমিতিগুলোর কাজ-কর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং সমন্বয় সাধন ।

(গ) জাতীয় সমবায় সমিতি, যার সদস্য হবে ১০টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি, এবং উদ্দেশ্য হবে দেশব্যাপী উক্ত সদস্য সমিতিগুলোর কাজ-কর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং সমন্বয় সাধন ।


৩. সমবায় সমিতি সমবায় আইনে গঠিত একটি কৃত্রিম ও স্বতন্ত্র সত্তাবিশিষ্ট সংগঠন যার স্থায়ী ধারাবাহিকতা থাকবে, উদ্দেশ্য পূরণে যে কোনো ধরনের সম্পদ অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর করার এবং চুক্তি করার অধিকার থাকবে। সমিতির একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং সমিতির নামেও অন্য কেউ মামলা দায়ের করতে পারবে।


৪. সমবায় সমিতির মূলধন সমমূল্যের কতকগুলো শেয়ারে বিভক্ত থাকে। সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্য অন্তত একটি শেয়ার ক্রয় করে সমিতির সদস্য হতে পারবেন তবে কোনো সদস্য সমিতির মোট শেয়ার মূলধনের এক-পঞ্চমাংশের অধিক শেয়ার ক্রয় করতে পারে না। সদস্যগণের দায় সাধারণত সীমিত ও শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ।


৫. ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার সকল স্তরে সমবায় সমিতিকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হয়। সকল শ্রেণির সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্য সমিতির কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি মাত্র ভোট প্রয়োগের অধিকারী। উক্ত ভোট ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রয়োগ করতে হয়, প্রতিনিধির মাধ্যমে কোনো ভোট দেওয়া যায় না ৷


৬. সমবায় আইন ২০০১ অনুযায়ী সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত বা অনুমোদিত না হলে কোনো ব্যক্তি,
ব্যক্তিসংঘ, সংগঠন বা সমিতি তার নামের অংশ হিসেবে সমবায় বা Cooperative শব্দটি ব্যবহার
করতে পারবে না। অর্থাৎ নিবন্ধন ব্যতীত ‘সমবায়' শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ । অন্যান্য কারবারের সাথে সমবায়ের বেশ মিল থাকলেও কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্যও রয়েছে ।

Content added By
Promotion